Technology

Latest News:

Tuesday, October 10, 2017

কঙ্কাল বেরিয়ে পড়া ব্যাটিং!


এই দিনেও মাঠে থাকার কথা ছিল তাঁদের। কিন্তু আড়াই দিনে ব্লুমফন্টেইন টেস্ট শেষ হয়ে যাওয়ায় অনুশীলনে বাংলাদেশ। সেই ম্যানগাউং ওভালে। ঐচ্ছিক সেই অনুশীলনে অবশ্য টেস্টের আট ব্যাটসম্যানের কেউ আসেননি। দুই টেস্টে যেমন তাঁদের পারফরম্যান্স, এর সঙ্গে ধাতস্থ হওয়ার জন্য হয়তো-বা সময় নিচ্ছেন কিছুটা।
আসলে কতটা এগিয়েছে বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেট? এই ফরম্যাটের ব্যাটিং? পরিসংখ্যান একটা আস্ত গাধা বলা হয় বটে, কিন্তু বেশির ভাগ সময়ই তো সেটিকে উপেক্ষার উপায় থাকে না। আর সেই রেকর্ড বই বাংলাদেশ ক্রিকেটের কঙ্কালটা বের করে দিচ্ছে বড্ড নির্মমভাবে!
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে পর পর তিন ইনিংসে ৯০, ১৪৭ ও ১৭২ রানে অলআউট হওয়ার পর সেই কঙ্কালটাকেও তো মনে হচ্ছে প্রস্তর যুগের! সেই ব্যাটিংয়ে প্রতিচ্ছবি আবার বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটের প্রস্তর যুগের।
প্রোটিয়াদের বিপক্ষে টপ অর্ডারের সাতজনের পারফরম্যান্সে একবার চোখ বোলানো যাক। তামিম ইকবাল খেলেছেন কেবল প্রথম টেস্ট। সেখানে প্রথম ইনিংসের ৩৯ রানের পর দ্বিতীয়টিতে শূন্য; গড় তাই ১৯.৫। আরেক ওপেনার ইমরুল কায়েসের চার ইনিংসে রান ৭, ৩২, ২৬ ও ৩২।
সাকুল্যে ৯৭; গড় ২৪.২৫। এমনিতে হয়তো অত খারাপ মনে হবে না। ভাববেন, অন্তত তিন ইনিংসে শুরু পেয়েও কেন তা বড় করতে পারেননি? কিন্তু ক্রিজে ইমরুল যেভাবে ধুঁকেছেন, সেটি দেখলে মনে হবে এই ঢের! এর চেয়ে বেশি আসলে প্রাপ্য নয় তাঁর। আর সৌম্য সরকার? দ্বিতীয় টেস্টে সুযোগ পেয়ে দুই ইনিংসে ৯ ও ৩ রান। মোট ১২ রান, গড় ৬। এর চেয়ে দৃষ্টিকটু আর কী হয়!
মমিনুল হক পচেফস্ট্রুমে ৭৭ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। সেখানেই দায়িত্ব শেষ। পরের তিনটি ইনিংস তাই ০, ৪ ও ১১ রানের। সিরিজে তাঁর মোট রান ৯২; গড় ২৩। অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম জীবন পেয়েছেন দফায় দফায়। কিন্তু কোনোবারই তা কাজে লাগিয়ে বড় স্কোর করতে পারেননি। ৪৪, ১৬, ৭ ও ২৬-এ অধিনায়কের মোট রান ৯৩, গড় ২৩.২৫। কোনো ইনিংসেই তাঁর ব্যাটিং আস্থা ছড়াতে পারেনি। মাহমুদ উল্লাহও তাই। যদিও সিরিজের প্রথম ও শেষ ইনিংসে ৬৬ ও ৪৩ রান তাঁর। মাঝের দুটো ইনিংসে ৯ ও ৪। সব মিলিয়ে সিরিজে দেশের সর্বোচ্চ ১২২ রান তাঁর। সর্বোচ্চ ৩০.৫০ গড়ও তাঁর। এর পরই লিটন দাশ। ব্লুমফন্টেইনে প্রথম ইনিংসে ৭০ রানের বাইরে ২৫, ৪ ও ১৮ রানের অন্য তিন ইনিংস। মোট রান ১১৭; গড় ২৯.২৫। আর সাব্বির রহমানের অবিমৃশ্যতার কাছে হার মানতে হবে সবাইকে। সেটি ৩০, ৪, ০ ও ৪ রানের ইনিংসে মোট ৩৮ রান কিংবা ৯.৫ গড়ের জন্য নয় শুধু। বারবার যেভাবে আউট হয়েছেন, সেটি টেস্ট ক্রিকেটে বড্ড বেমানান।
তাহলে সব মিলিয়ে দাঁড়ালটা কী! সিরিজে বাংলাদেশের দুজন মাত্র ব্যাটসম্যান মাহমুদ ও লিটনের মোট রান ১০০-র ওপরে। যেখানে দক্ষিণ আফ্রিকার চার ব্যাটসম্যানের রান দুই শর ওপরডিন এলগার (৩৩০), হাশিম আমলা (২৯৭), এইডেন মারক্রাম (২৫৫) ও ফাফ দু প্লেসিস (২৪২)।   সফরকারীদের সর্বোচ্চ ৩০.৫০ গড় মাহমুদের। বিপরীতে স্বাগতিকদের ওই চার ব্যাটসম্যানের গড় চোখ কপালে তুলে দেওয়ার মতোদু প্লেসিস (২৪২), এলগার (১১০), আমলা (৯৯) ও মারক্রাম (৮৫)। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের চার ইনিংসে মোট ফিফটি তিনটি। আর দক্ষিণ আফ্রিকার সেঞ্চুরিই ছয়টি।
টাইগার উডসের সঙ্গে সিদ্দিকুর রহমান গলফ খেললে পার্থক্যটা হয়তো এত বিশালই হতো!
এই সিরিজটি ব্যতিক্রম হিসেবে দেখবেন? ব্যাটিং বিবেচনায় অন্তত তেমন কিছু ভাবার উপায় নেই। পচেফস্ট্রুম ও ব্লুমফন্টেইনের বিপর্যয়টা যেন সবার অলক্ষ্যেই কড়া নাড়ছিল দরজায়। রেকর্ড অন্তত তেমন সাক্ষ্যই দেয়। ২০১৫ সাল থেকে ধরলে টেস্টে ৩০টি ইনিংসে ব্যাটিং করেছে বাংলাদেশ। ২০১৫ ও ২০১৬ সালে ১২ ইনিংসের মধ্যে একটিতেও তারা অলআউট হয়নি ২০০-র নিচে। কিন্তু এ বছর খেলা ১৮ ইনিংসের মধ্যে ২০০-র আগে অলআউট সাতবার! জানুয়ারিতে ওয়েলিংটনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় ইনিংসে ১৬০ রানে গুঁড়িয়ে যাওয়ায় শুরু। ক্রাইস্টচার্চে দ্বিতীয় টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে আবার ১৭৩ রানে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজে গলের দ্বিতীয় ইনিংসে ১৯৭ রানে গুটিয়ে যাওয়া। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে চট্টগ্রামেও একবার অলআউট ১৫৭ রানে। এরপর দুঃস্বপ্নের এই সিরিজ। পচেফস্ট্রুমে ৯০ রানে মুখ থুবড়ে পড়ার পর ব্লুমফন্টেইনে ১৪৭ এবং ১৭২ রানে অলআউট।
এমন পরিসংখ্যানকে উপেক্ষার উপায় নেই। দলের প্রতিনিধি হয়ে লিটন তাই যখন বলেন, বাংলাদেশ ব্লুমফন্টেইন টেস্টের দ্বিতীয় দিন ছয় শ রান করতে পারবে কিংবা কোনো এক ব্যাটসম্যান করতে পারেন ডাবল সেঞ্চুরিতখন নিজেদের ক্রিকেটমূর্খতার কারণে আয়নার সামনে আরেকবার দাঁড়ানো ছাড়া উপায় থাকে না। আর সাম্প্রতিককালের এমন বাজে ব্যাটিংয়ের পরও যদি সতর্কঘণ্টা না বাজে বাংলাদেশ ক্যাম্পে, তাহলে পাগলাঘণ্টি বেজে উঠতে দেরি নেই বোধকরি!


No comments:

Post a Comment

Copyright © 2014 Bd Sports All Right Reserved
^