Technology

Latest News:

Tuesday, October 10, 2017

এই মুস্তাফিজকেই তো চাই


না, এমন কোনো ধ্বংসযজ্ঞ চালাননি। আবির্ভাবেই যে কাটার জাদুতে মুগ্ধতা ছড়িয়েছিলেন, তেমন কোনো জাদুর পরশ বুলিয়ে দেননি। নামের পাশে নেই ৫-৬ উইকেট। তবু এ দিনের মুস্তাফিজ দুর্দান্ত; প্রতিকূলতার দেয়াল ভেঙে বেরিয়ে আসা মুস্তাফিজ।
আগের দিন নিয়েছিলেন একটি উইকেট। সেটিও মুশফিকুর রহিমের দুর্দান্ত ক্যাচের সৌজন্যে। বুধবার নিয়েছেন আরও দুটি। সব মিলিয়ে ৮৪ রানে ৩ উইকেট। বোলিং ফিগার বলবে, আহামরি কিছু নয়। বাস্তবতা ছিল ভিন্ন!
তৃতীয় দিনের মুস্তাফিজ ছিলেন আগ্রাসী। শরীরী ভাষায় ছিল বারুদ। এদিনের মুস্তাফিজ ছিলেন পরিশ্রমী। স্রেফ বোলিং করার জন্য করা নয়, বরং ছিল কিছু করে দেখানোর তাড়না। মন্থর উইকেটে ওভারপ্রতি চার রানকেও তাই অনায়াসে চালিয়ে নেওয়া যায়। কারণ প্রায় প্রতিটি বলেই কিছু না কিছু করতে চেয়েছেন। ব্যাটসম্যানদের ভাবিয়েছেন, ভুগিয়েছেন।
যেটি চোখে পড়ার মত, তিন উইকেটের একটিও কাটারে নয়। তার ট্রেডমার্ক এই ডেলিভারি ছাড়াই করেছেন প্রভাব বিস্তারী বোলিং। লেংথের বৈচিত্র্য ছিল, মেরেছেন বাউন্সার। ছিল সুইংয়ের প্রচেষ্টা। ডেভিড ওয়ার্নারকে আউট করলেন শর্ট বলে। সিমে পিচ করানো একটু দেরিতে ভেতরে ঢোকা বলে ফিরিয়েছেন ম্যাথু ওয়েডকে। ছিল রিভার্স সুইংয়ের ছোঁয়া। সবই বলে দিচ্ছে, কাটারের নির্ভরতা কাটিয়ে মুস্তাফিজ এগিয়ে চলছেন সামনে। অস্ট্রেলিয়ার মত দলকে এই কঠিন কন্ডিশন ও উইকেটেও তিনি ভোগাতে পারেন কাটার ছাড়াও।
অস্ত্রোপচার থেকে ফেরার পর এদিন নি:সন্দেহে ছিল তার সেরা দিনগুলির একটি। একেবারে খারাপ করছিলেন না এই টেস্টের আগেও। কেবল চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিটায় ছিলেন বিবর্ণ। তার আগে শ্রীলঙ্কায় তিন ওয়ানডেতে ছয় উইকেট নিয়েছেন। শেষ টি-টোয়েন্টিতে চারটি। আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজে স্বাগতিকদের বিপক্ষে ৪ উইকেট, ভালো করেছিলেন নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষেও। মুস্তাফিজ হারিয়ে গেছেন বা আগের মুস্তাফিজ আর নেই বলে যে রব উঠেছে চারদিকে, সেটা তাই একরকম অমূলকই। এই টেস্ট আলাদা তবু অন্য দিক থেকে।
সেটি হলো তার গতি। চোটের আগে নিয়মিতই বোলিং করতেন ১৪০ কিলোমিটারের আশেপাশে গতিতে। তার কাটারও তাই কার্যকর হতো বেশি। কাঁধের অস্ত্রোপচারের পর মুস্তাফিজের সেই গতিই ফিরে আসছিল না আর। সবচেয়ে দুর্ভাবনা ছিল সেটিই। ১৩০ কিলোমিটার ছাড়াতে পারছিলেন কদাচিৎ।
এই টেস্টে ১৩৫ কিলোমিটার ছাড়িয়েছেন নিয়মিতই। ছাড়িয়েছেন ১৩৮ কিলোমিটারও। মন্থর উইকেটে এই গতি মানে একটু সহায়ক উইকেটে গতি ১৪০ কিলোমিটার ছাড়াতেই পারে। গতিটা ভালো ছিল বলেই শরীরী ভাষার আগ্রাসন কার্যকর হয়েছে আরও বেশি। দিনশেষে সংবাদ সম্মেলনে নিজেও বললেন, গতিটা অবশেষে সন্তুষ্টির জায়গায় এসেছে। আরও কিছু কাজ করতে চান লেংথ নিয়ে।
লেংথ যে বেশ ভালো ছিল, সেটি ফুটে উঠেছে বোলিংয়েই। বলার অপেক্ষা রাখে না, মৌসুম শুরুর আগে বোলিং কোচ কোর্টনি ওয়ালশের সঙ্গে কয়েক দিন নিবিড়ভাবে কাজ করার সুফল পেতে শুরু করেছেন। ওয়ালশ সে সময় বলেছিলেন, মুস্তাফিজের গতি আগের জায়গায় আনার চেষ্টা করছেন, দেখিয়ে দিচ্ছেন লেংথ বৈচিত্র্য।
মুস্তাফিজ দিনশেষে জানালেন, ওয়ালশের সঙ্গে কাজের অর্ধেকটা কেবল দিতে পেরেছেন।
আমি অল্প কয়েকদিন অনুশীলন করেছি। এখনো ওইভাবে পুরোটা ম্যাচে করা হয় নাই। ফিফটি-ফিফটি বলতে পারেন।
অর্ধেক দেখিয়ে যে বোলিং করেছেন, সেটিও আভাস দিচ্ছে সম্ভাবনাময় নিকট ভবিষ্যতের। ওয়ালশের কাছ থেকে পাওয়া শিক্ষার ৮০-৯০ শতাংশ কাজে লাগাতে পারলে কী দারুণ ফলই না অপেক্ষা করছে!
আরও দুটি দিক থেকে মুস্তাফিজের এদিনের বোলিং গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, অস্ট্রেলিয়াকে বার্তা দেওয়া। এই উইকেট-কন্ডিশনেও দারুণ বোলিং করেছেন প্যাট কামিন্স। বাংলাদেশও যে শুধু স্পিন সর্বস্ব দল নয়, এই প্রতিকূল আবহেও কার্যকর বোলিংয়ের মত স্কিলফুল পেসার বাংলাদেশের আছে, সেটি দেখিয়ে দেওয়া।
দ্বিতীয়ত, তার নিজের আত্মবিশ্বাস। এই উইকেটে অস্ট্রেলিয়ার মত দলের বিপক্ষে কাটার নির্ভর না হয়েও যেভাবে কার্যকর হয়েছেন, নতুন কিছু স্কিলের নমুনা দেখিয়েছেন, তার আত্মবিশ্বাসের জন্য এটি হবে দারুণ টনিক। তিনি এখন জানেন, উইকেটে কাটার গ্রিপ না করলে, পেসারদের জন্য কিছু না থাকলেও সফল হওয়ার মত রসদ তার আছে। এক ধাক্কায় তাকে পরের ধাপে পৌঁছে দিয়েছে এই টেস্টের বোলিং।
সব মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত এই টেস্ট থেকে বাংলাদেশের সেরা প্রাপ্তি তৃতীয় দিনের মুস্তাফিজের বোলিং। ঢাকা টেস্টে প্রথম স্পেলে দুর্দান্ত বোলিং করেছিলেন। এরপর একটু বিবর্ণ হয়ে যান। সেটি ছিল হয়ত ট্রেলার। এবার দেখা গেছে সিনেমার আধেকটা, তিনি যেমন বলেছেন, ফিফটি-ফিফটি। সামনে পুরোটা দেখার অপেক্ষা!
ম্যাচের গতিপথ যেদিকেই গড়াক, মুস্তাফিজের গতিপথটা বোঝা গেছে নিশ্চিত। শুধু কাটারের জাদু নয়, পরিপূর্ণ বাঁহাতি পেসার হয়ে ওঠার পথ।
বাংলাদেশ চাইবে, এই পথ ধরেই এগিয়ে যাবেন মুস্তাফিজ। এই টেস্টের তৃতীয় দিনটির মতোই!


অবশেষে ভারতকে হারাতে পারল অস্ট্রেলিয়া


বৃহস্পতিবার চতুর্থ ওয়ানডেতে বেঙ্গালুরুতে ভারতকে ২১ রানে হারিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। ৫ ম্যাচ সিরিজের প্রথম তিনটিতেই জিতেছিল ভারত।
৫০ ওভারে অস্ট্রেলিয়ার ৩৩৪ রানের জবাবে ভারত তুলতে পারে ৩১৩ রান। চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে ভারত সবশেষ ওয়ানডে হেরেছিল সেই ২০০৩ সালে।
অস্ট্রেলিয়ার বড় রানের ভিত গড়ে দেন ওয়ার্নার ও অ্যারন ফিঞ্চ। সিরিজে আগের তিন ম্যাচে প্রত্যাশা পূরণ করতে না পারা ওয়ার্নার জ্বলে ওঠেন নিজের শততম ম্যাচে। অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে শততম ওয়ানডেতে করেন সেঞ্চুরি।
এই দুজন মিলেই খেলে ফেলেন ৩৫ ওভার, গড়েন ২৩১ রানের উদ্বোধনী জুটি। দুজনের মধ্যে বেশি আক্রমণাত্মক ছিলেন ওয়ার্নার। আগে আউটও হন তিনিই। ১২ চার ও ৪ ছক্কায় ১১৯ বলে ১২৪ করে ফেরেন ছক্কা মারার চেষ্টায়।
আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান ফিঞ্চ এবার আউট হয়েছেন সেঞ্চুরির খুব কাছে গিয়ে। ১০ চার ও ৩ ছক্কায় করেছেন ৯৪।

এই দুজনের পর স্টিভেন স্মিথের দ্রুত বিদায়ে একটু কমে যায় রানের গতি। তবে পিটার হ্যান্ডসকমের দারুণ ব্যাটিংয়ে আবার গতি পায় ইনিংস। ওয়ানডে দলে জায়গা পাকা করার লড়াইয়ে থাকা ব্যাটসম্যান ৩০ বলে করেন ৪৩।
৩৩৫ রানের লক্ষ্য এই যুগে অসম্ভব নয় মোটেও। ভারতের শুরুটায় ছিল রান তাড়ারই ইঙ্গিত। টানা দ্বিতীয় ম্যাচে শতরানের জুটি গড়েন রোহিত শর্মা ও অজিঙ্কা রাহানে। তবে আগের ম্যাচের মতো এবারও দুজন পঞ্চাশকে নিতে পারেননি সেঞ্চুরিতে।
৫ ছক্কায় ৫৫ বলে ৬৫ করে স্টিভেন স্মিথের দুর্দান্ত ফিল্ডিংয়ে রান আউট হন রোহিত। রাহানে করেন ৬৬ বলে ৫৩।
তিনে নেমে বড় কিছু করতে ব্যর্থ কোহলি। ঝড় তোলার ইঙ্গিত দিয়েও হার্দিক পান্ডিয়া ফিরেছেন ৩ ছক্কায় ৪১ রান করে।
এরপরও ভারত পথে ছিল কেদার যাদব ও মনিশ পান্ডের ব্যাটে। তবে শেষ দিকে তিন বলের মধ্যে দুজনের বিদায়ে শেষ হয় ভারতের আশা। ৬৯ বলে ৬৭ করেছেন কেদার যাদব, ২৫ বলে ৩৩ মনিশ।
স্লগ ওভারে দুর্দান্ত বোলিং করেছেন কেন রিচার্ডসন ও প্যাট কামিন্স। শেষের ৩ ওভার আগেও নিশ্চিত ছিল না ম্যাচের ফল। অস্ট্রেলিয়ানদের পেসারদের সৌজন্যে জয়টা শেষ পর্যন্ত ২১ রানের।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
অস্ট্রেলিয়া: ৫০ ওভারে ৩৩৪/৫ (ফিঞ্চ ৯৪, ওয়ার্নার ১২৪, হেড ২৯, স্মিথ ৩, হ্যান্ডসকম ৪৩, স্টয়নিস ১৫*, ওয়েড ৩*; শামি ০/৬২, উমেশ ৪/৭১, আকসার ০/৬৬, পান্ডিয়া ০/৩২, চেহেল ০/৫৪, কেদার ১/৩৮)।
ভারত: ৫০ ওভারে ৩১৩/৮ (রাহানে ৫৩, রোহিত ৬৫, কোহলি ২১, পান্ডিয়া ৪১, কেদার ৬৭, মনিশ ৩৩, ধোনি ১৩, আকসার ৫, শামি ৬*, উমেশ ২* ; কামিন্স ১/৫৯, কোল্টার-নাইল ২/৫৬, রিচার্ডসন ৩/৫৮, স্টয়নিস ০/৩৪, ফিঞ্চ ০/১, জ্যাম্পা ১/৬৩, হেড ০/৩৮)
ফল: অস্ট্রেলিয়া ২১ রানে জয়ী
সিরিজ: ৫ ম্যাচ সিরিজে ভারত ৩-১ ব্যবধানে এগিয়ে
ম্যান অব দা ম্যাচ: ডেভিড ওয়ার্নার


রোহিতের সেঞ্চুরিতে শীর্ষে ফিরল ভারত


শেষ ওয়ানডেতে নাগপুরে অস্ট্রেলিয়াকে ৭ উইকেটে হারিয়েছে ভারত। অস্ট্রেলিয়ার ২৪২ রান ভারত পেরিয়ে যায় ৪৩ বল বাকি রেখেই।
৪-১ ব্যবধানের জয়ে ওয়ানডে র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষস্থান ফিরে পেল ভারত। টেস্টেও এখন এক নম্বরে বিরাট কোহলির দল।
খানিকটা মন্থর উইকেটে মাঝারি স্কোর নিয়েও আশায় ছিল অস্ট্রেলিয়া। তবে ১০৯ বলে ১২৫ রানের দুর্দান্ত ইনিংসে সেই আশা গুড়িয়ে দিয়েছে রোহিতের ব্যাট। টানা চতুর্থ ম্যাচে ফিফটি করেছেন রাহানে। দুজনের জুটিতে টানা তৃতীয় ম্যাচে ভারত পেয়েছে শতরানের শুরু।
টস ভাগ্যকে আবারও পাশে পেয়েছিলেন স্টিভেন স্মিথ। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া পারেনি বড় স্কোর গড়তে।
অস্ট্রেলিয়াকে যথারীতি ভালো শুরু এনে দিয়েছিলেন ডেভিড ওয়ার্নার ও অ্যারন ফিঞ্চ। তবে দুজনের কেউই এদিন করতে পারেননি বড় কিছু। ৩২ রান করা ফিঞ্চকে ফিরিয়ে ৬৬ রানের জুটি ভাঙেন হার্দিক পান্ডিয়া।
আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান ওয়ার্নারকে এবার ৫৩ রানে থামান আকসার প্যাটেল। নিজের মানে বাজে একটি সিরিজ কাটানো স্মিথ ব্যর্থ শেষ ম্যাচেও।
১১৮ রানে ৪ উইকেট হারানো অস্ট্রেলিয়াকে কিছুটা এগিয়ে নেন ট্রাভিস হেড ও মার্কার্স স্টয়নিস। তবে সময়ের সঙ্গে ঝড় তুলতে পারেননি দুজন, টানতেও পারেননি শেষ পর্যন্ত।
শেষ দিকে রানের গতি সেভাবে বাড়ানে পারেননি ম্যাথু ওয়েড, জেমস ফকনার। অস্ট্রেলিয়া তাই আটকে যায় আড়াইশর নিচেই। শেষ ১০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে তুলতে পারে তারা মাত্র ৫২ রান।
দ্বিতীয় ইনিংসে আরেকটু মন্থর হয়ে পড়া উইকেটে শুরুতে সময় নেন রোহিত ও রাহানে। তবে থিতু হওয়ার পর দুজনই খেলেছেন দারুণ সব শট। স্ট্রোকের দ্যুতিতে বোঝাই যায়নি উইকেটের মন্থরতা।
আগের দুই ম্যাচে ১৩৯ ও ১০৬ রানের পর এবার রাহানে ও রোহিতের জুটি ১২৪ রানের। শিখর ধাওয়ানের অনুপস্থিতিতে ওপেন করার সুযোগ পাওয়া রাহানে টানা চতুর্থ ম্যাচে করেছেন ফিফটি।
এই জুটি ভাঙার পরও ম্যাচে ফেরার সামান্যতম সম্ভাবনা জাগাতে পারেনি অস্ট্রেলিয়া। দ্বিতীয় উইকেটে ৯৯ রানের জুটি গড়েন রোহিত ও বিরাট কোহলি।
৯৪ বলে রোহিত স্পর্শ করেন সেঞ্চুরি। ১৪ ওয়ানডে সেঞ্চুরির ৬টিই করলেন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। দেশের মাটিতে ২ হাজার আর ক্যারিয়ারে ৬ হাজার রানও স্পর্শ করেন এই ইনিংসের পথে।
১১ চার ও ৫ ছক্কায় রোহিত ফিরেছেন ১০৯ বলে ১২৫ রান করে। এই উইকেটের পর ওই ওভারে কোহলিকেও ফেরান জ্যাম্পা। তবে ম্যাচ তখন কার্যত শেষ। আনুষ্ঠানিকতা সেরেছেন কেদার যাদব ও মনিশ পান্ডে।
দুই দল এরপর খেলবে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ। আগামী শনিবার যেটি শুরু রাঁচিতে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
অস্ট্রেলিয়া: ৫০ ওভারে ২৪২/৯ (ওয়ার্নার ৫৩, ফিঞ্চ ৪২, স্মিথ ১৬, হ্যান্ডসকম ১৩, হেড ৪২, স্টয়নিস ৪৬, ওয়েড ২০, ফকনার ১২, কামিন্স ২*, কোল্টার-নাইল ০; ভুবনেশ্বর ১/৪০, বুমরাহ ২/৫১, পান্ডিয়া ১/১৪, কুলদিপ ০/৪৮, কেদার ১/৪৮, আকসার ৩/৩৮)।
ভারত: ৪২.৫ ওভারে ২৪৩/৩ (রাহানে ৬১, রোহিত ১২৫, কোহলি ৩৯, কেদার ৫*, মনিশ ১১*; কামিন্স ০/২৯, কোল্টার-নাইল ১/৪২, স্টয়নিস ০/২০, ফকনার ০/৩৭, জ্যাম্পা ২/৫৯, হেড ০/৩৮, ফিঞ্চ ০/১৭)
ফল: ভারত ৭ উইকেটে জয়ী
সিরিজ: ৫ ম্যাচ সিরিজে ভারত ৪-১ ব্যবধানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: রোহিত শর্মা
ম্যান অব দা সিরিজ: হার্দিক পান্ডিয়া


মুস্তাফিজকে পেল রাজশাহী কিংস


ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো চারজন করে দেশি ক্রিকেটারকে ধরে রাখায় এবং আগেই অনেক বিদেশি খেলোয়াড় নিবন্ধন করে ফেলায় প্লেয়ার্স ড্রাফটের উত্তেজনা কমে গিয়েছিল আগেই। শনিবার দুপুরে বিপিএলের পঞ্চম আসরের ড্রাফটে মূল আকর্ষণ ছিলেন মুস্তাফিজই।
সাত আইকন ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম, মাশরাফি কিন মুর্তজা, মাহমুদউল্লাহ, সৌম্য সরকার ও সাব্বির রহমানকে আগেই বেছে নিয়েছে সাত দল। আইকন হিসেবে বরিশাল বুলস নিয়েছিল মুস্তাফিজকেও। তবে আর্থিক অব্যবস্থাপনার দায়ে বরিশালের এই ফ্র্যাঞ্চাইজি নিষিদ্ধ হওয়ায় প্লেয়ার্স ড্রাফটে আসেন মুস্তাফিজ।
ড্রাফটের শুরুতে লটারিতে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর ক্রিকেটার বেছে নেওয়ার ক্রম ঠিক করা হয়। লটারিতে প্রথম হয়ে রাজশাহী কিংস ড্রাফটের একমাত্র এ‍ প্লাস ক্যাটাগরির ক্রিকেটার মুস্তাফিজকে নেয়।
গতবারের রানার্সআপরা আরও নিয়েছে জাকির হাসান, নিহাদ-উজ-জামান, রনি তালুকদার হোসেন আলি, নাঈম ইসলাম জুনিয়র ও কাজী অনিককে।
ড্রাফট থেকে বিদেশি খেলোয়াড় পাকিস্তানের উসামা মির ও রাজা আলি দারকে নিয়েছে দলটি।
গতবারের চ্যাম্পিয়ন ঢাকা ডায়নামাইটস ডেকেছে আবু হায়দার রনি, জহুরুল ইসলাম, নাদিফ চৌধুরী, সাকলাইন সজীব, সৈয়দ খালেদ আহমেদ, সাদমান ইসলাম ও নুর আলম সাদ্দামকে।
এদিন ঢাকার নেওয়া দুই বিদেশি ইংল্যান্ডের জো ডেনলি ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের আকিল হোসেন।
খুলনা টাইটান্স নিয়েছে নাজমুল হোসেন শান্ত, আবু জায়েদ, আফিফ হোসেন, ইয়াসির আলী চৌধুরী, ইমরান আলি, মুক্তার আলী, ধীমান ঘোষ ও সাইফ হাসানকে।
ড্রাফট থেকে শ্রীলঙ্কার শিহান জয়াসুরিয়া ও জফরা আর্চারকে দলে নিয়েছে তারা।
এই মৌসুমে নতুন ফ্র্যাঞ্চাইজিতে ফেরা সিলেট সিক্সার্স দলে নিয়েছে আবুল হাসান, শুভাগত হোম চৌধুরী, কামরুল ইসলাম রাব্বি, নাবিল সামাদ, মোহাম্মদ শরীফ, ইমতিয়াজ হোসেন ও শরীফউল্লাহ।
শ্রীলঙ্কার চতুরঙ্গা ডি সিলভা ও পাকিস্তানের গোলাম মুদাসসির খানকে এদিন দলে নিয়েছে সিলেট।
চিটাগং ভাইকিংস বেছে নিয়েছে সানজামুল ইসলাম, আল আমিন জুনিয়র, আলাউদ্দিন বাবু, তানবীর হায়দার খান, ইরফান শুক্কুর, নাঈম হাসান ও ইয়াসির আরাফাতকে।
আফগানিস্তানের নাজিবুল্লাহ জাদরান ও ইংল্যান্ডের লুইস রিসকে ড্রাফট থেকে ডেকেছে দলটি।
শাহরিয়ার নাফিস আহমেদ, নাজমুল ইসলাম অপু, জিয়াউর রহমান, ফজলে রাব্বি, আব্দুর রাজ্জাক, এবাদত হোসেন, ইলিয়াস সানি, নাহিদুল ইসলামকে নিয়েছে রংপুর রাইডার্স।
তাদের ডাকা তিন বিদেশি ইংল্যান্ডের স্যাম হেইন এবং আফগানিস্তানের সামিউল্লাহ শেনওয়ারি ও জহির খান।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স নিয়েছে আল আমিন হোসেন, আরাফাত সানি, অলক কাপালী, মেহেদি হাসান, মেহেদী হাসান রানা, এনামুল হক, রকিবুল হাসান।
জিম্বাবুয়ের সলোমান মির ও পাকিস্তানের রুম্মান রাইসকে ড্রাফট থেকে নিয়েছে দলটি।
ড্রাফটের ২০৮ বিদেশির মধ্যে এদিন ডাকা হয়েছে ১৫ জন ক্রিকেটারকে। স্থানীয় ১৪০ জনের মধ্যে ডাক পেয়েছেন ৫০ জন।
আগামী ২ নভেম্বর শুরু হবে বিপিএলের পঞ্চম আসর।
বিপিএলের দল:
ঢাকা ডায়নামাইটস
স্থানীয়: সাকিব আল হাসান, মোসাদ্দেক হোসেন, মোহাম্মদ শহীদ, মেহেদী মারুফ, আবু হায়দার রনি, জহুরুল ইসলাম, নাদিফ চৌধুরী, সাকলাইন সজীব, সৈয়দ খালেদ আহমেদ, সাদমান ইসলাম, নুর আলম সাদ্দাম।
বিদেশি: কুমার সাঙ্গাকারা, শেন ওয়াটসন, শহিদ আফ্রিদি, আমির, শাহিনশাহ আফ্রিদি, কেভিন লুইস, কেভন কুপার, রেনসফোর্ড বেটন, সুনিল নারাইন, কাইরন পাওয়েল, ক্যামেরন ডেলপোর্ট, গ্রায়েম ক্রেমার, জো ডেনলি, আকিল হোসেন।
চিটাগং ভাইকিংস
স্থানীয়: সৌম্য সরকার, তাসকিন আহমেদ, এনামুল হক, শুভাশিস রায় চৌধুরী, সানজামুল ইসলাম, আল আমিন জুনিয়র, আলাউদ্দিন বাবু, তানবীর হায়দার খান, ইরফান শুক্কুর, নাঈম হাসান, ইয়াসির আরাফাত।
বিদেশি: লুক রনকি, লিয়াম ডসন, জিবন মেন্ডিস, সিকান্দর রাজা, জার্মেইন ব্ল্যাকউড, দিলশান মুনাবিরা, মিসবাহ-উল-হক, নাজিবুল্লাহ জাদরান, লুইস রিস।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স
স্থানীয়: তামিম ইকবাল, ইমরুল কায়েস, লিটন দাস, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, আল আমিন হোসেন, আরাফাত সানি, অলক কাপালী, মেহেদি হাসান, মেহেদী হাসান রানা, এনামুল হক, রকিবুল হাসান।
বিদেশি: মার্লন স্যামুয়েলস, ডোয়াইন ব্রাভো, জস বাটলার, হাসান আলি, ফাহিম আশরাফ, ইমরান খান জুনিয়র, শোয়েব মালিক, মোহাম্মদ নবি, রশিদ খান, অ্যাঞ্জলো ম্যাথিউস, কলিন মানরো, ফখর জামান, সলোমান মির, রুম্মান রাইস।
খুলনা টাইটান্স
স্থানীয়: মাহমুদউল্লাহ, শফিউল ইসলাম, মোশাররফ হোসেন, আরিফুল হক, নাজমুল হোসেন শান্ত, আবু জায়েদ, আফিফ হোসেন, ইয়াসির আলী চৌধুরী, ইমরান আলি, মুক্তার আলী, ধীমান ঘোষ, সাইফ হাসান।
বিদেশি: জুনায়েদ খান, সরফরাজ আহমেদ, শাদাব খান, সিকুগে প্রসন্ন, বেনি হাওয়েল, ডাভিড মালান, রাইলি রুশো, কাইল অ্যাবট, ক্রিস লিন, কার্লোস ব্র্যাথওয়েট, চ্যাডউইক ওয়ালটন, শিহান জয়াসুরিয়া, জফরা আর্চার।
রাজশাহী কিংস
স্থানীয়: মুশফিকুর রহিম, মুমিনুল হক, মেহেদী হাসান মিরাজ, ফরহাদ রেজা, মুস্তাফিজুর রহমান, জাকির হাসান, নিহাদ-উজ-জামান, রনি তালুকদার, হোসেন আলি, নাঈম ইসলাম জুনিয়র, কাজী অনিক।
বিদেশি: লুক রাইট, কেসরিক উইলিয়ামস, লেন্ডল সিমন্স, ড্যারেন স্যামি, ম্যালকম ওয়ালার, সামিট প্যাটেল, মোহাম্মদ সামি, জেমস ফ্র্যাঙ্কলিন, ওসামা মির, রাজা আলি দার।
রংপুর রাইডার্স
স্থানীয়: মাশরাফি বিন মুর্তজা, মোহাম্মদ মিঠুন, সোহাগ গাজী, রুবেল হোসেন, শাহরিয়ার নাফিস আহমেদ, নাজমুল ইসলাম অপু, জিয়াউর রহমান, ফজলে রাব্বি, আব্দুর রাজ্জাক, এবাদত হোসেন, ইলিয়াস সানি, নাহিদুল ইসলাম।
বিদেশি: রবি বোপারা, ডেভিড উইলি, স্যামুয়েল বদ্রি, জনসন চার্লস, থিসারা পেরেরা, কুশল পেরেরা, অ্যাডাম লিথ, ক্রেস গেইল, স্যাম হেইন, সামিউল্লাহ শেনওয়ারি, জহির খান।
সিলেট সিক্সার্স
স্থানীয়: সাব্বির রহমান, নাসির হোসেন, তাইজুল ইসলাম, নুরুল হাসান, আবুল হাসান, শুভাগত হোম চৌধুরী, কামরুল ইসলাম রাব্বি, নাবিল সামাদ, মোহাম্মদ শরীফ, ইমতিয়াজ হোসেন, শরিফউল্লাহ।
বিদেশি: দাসুন শানাকা, ভানিদু হাসারাঙ্গা, লিয়াম প্লানকেট, রস হুইটলি, উসমান খান শেনওয়ারি, বাবর আজম, আন্দ্রে ফ্লেচার, ক্রিসমার সান্টকি, আন্দ্রে ম্যাকার্থি, ডেভি জ্যাকবস, রিচার্ড লেভি, চতুরঙ্গা ডি সিলভা, গোলাম মুদাসসির খান।


শামসুর রহমানের ঝড়ো সেঞ্চুরি


জাতীয় লিগের দ্বিতীয় স্তরে ঢাকা মেট্রো ও চট্টগ্রামের ম্যাচ ড্র হয়েছে দারুণ উত্তেজনা ছড়ানোর পর। অভাবনীয় এক জয়ের আশা জাগিয়েও শেষ পর্যন্ত পেরে ওঠেনি ঢাকা মেট্রো।
প্রথম ইনিংসে ১০৮ রানে লিড পাওয়া ঢাকা মেট্রো দ্বিতীয় ইনিংসে রীতিমত টি-টোয়েন্টি খেলেছে। ২১ ওভারে ১৬৫ রান তুলে ঘোষণা করে ইনিংস। ৬৭ বলে ১০২ রানের দুর্দান্ত অপরাজিত ইনিংস খেলেন শামসুর। শেষ ইনিংসে চট্টগ্রাম তোলে ৬ উইকেটে ৯৭ রান।
সোমবার শেষ দিন শুরু হয়েছিল চট্টগ্রামের প্রথম ইনিংস দিয়ে। ৮ উইকেটে ২১৬ রান নিয়ে শুরু করা দল যায় ২৬১ পর্যন্ত। দশে নেমে ৫ ছক্কায় ৩২ বলে ৫৮ রান করেন অভিষিক্ত ওয়াহিদুল আলম।
ঢাকা মেট্রো ব্যাটিংয়ে নেমে শুরু থেকেই তোলে ঝড়। ৬৪ বলে সেঞ্চুরি করেন শামসুর, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তার ১৪তম সেঞ্চুরি। ৮ চারের সঙ্গে ইনিংসে ছক্কা ছিল ৫টি।
বাকিরাও রান করেছে বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে। ঢাকা মেট্রো ইনিংস ঘোষণা করে ২১ ওভার খেলেই।
বাকি সময়ে ২৭৪ রান তাড়া করা ছিল ভীষণ কঠিন। চট্টগ্রামের লক্ষ্য ছিল টিকে থাকা। শুরুটাও ভালোই হয়েছিল তাদের। উদ্বোধনী জুটিতে আসে ৪৭ রান। এরপরই বিপত্তি। একের পর এক উইকেট হারিয়ে পরাজয়ের শঙ্কায় পড়ে যায় তারা।
২০ রানের মধ্যে পড়ে যায় ৫ উইকেট। তবে শেষ পর্যন্ত ইরফান শুক্কুরের ব্যাট ভরসা দেয় তাদের। ১১১ বল খেলে ২১ রানে অপরাজিত থাকেন শুক্কুর।
প্রথম ইনিংসে ৬৬ রান ও ২ ইনিংস মিলিয়ে ৪ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা মোহাম্মদ আশরাফুল।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ঢাকা মেট্রো ১ম ইনিংস: ৩৬৯/৯ (ডি.)
চট্টগ্রাম ১ম ইনিংস: ৯০.৫ ওভারে ২৬১ (আগের দিন ২১৬/৮) (রানা ১৮, ওয়াহিদুল ৫৮, বেলাল ০; শহিদ ২/৬৯, সানি ০/১২, শরিফ উল্লাহ ২/৩৩, আশরাফুল ৩/৬৫, সৈকত ১/২৪, নিহাদ ২/৫৬)।
ঢাকা মেট্রো ২য় ইনিংস: ২১ ওভারে ১৬৫/৩ (ডি.)(শামসুর ১০২*, সৈকত ১৯, আশরাফুল ১৮, আসিফ ২০, মার্শাল ৪*; রানা ১/৪৮, রনি ১/৩২, ওয়াহিদুল ০/২৬, কামরুল ০/৩৬, বেলাল ১/২২)।
চট্টগ্রাম ২য় ইনিংস: ৪৯ ওভারে ৯৭/৬ (লক্ষ্য ২৭৪) (সাদিকুর ৩৩, জসিম ১৯, মাহবুবুল ৭, তাসামুল ৪, শুক্কুর ২১*, সাজ্জাদুল ২, রনি ৭, কামরুল ১*; শহিদ ০/১৬, সানি ০/১৫, শরিফ উল্লাহ ১/১৯, সৈকত ২/২৫, নিহাদ ২/১১, আশরাফুল ১/৬, শামসুর ০/০, মার্শাল ০/৪)।
ফল: ম্যাচ ড্র
ম্যান অব দা ম্যাচ: মোহাম্মদ আশরাফুল


বাংলাদেশের পেসারদের পোলকের পরামর্শ


দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে বাংলাদেশের বোলিং দেখে হতাশ দক্ষিণ আফ্রিকার আরেক সাবেক পেসার ফ্যানি ডি ভিলিয়ার্স। মুস্তাফিজুর রহমান, রুবেল হোসেন, শুভাশিস রায় চৌধুরীর কাছ থেকে আরও নিয়ন্ত্রিত বোলিং আশা করেছিলেন তিনি।    
২-০ ব্যবধানে হারা সিরিজে দক্ষিণ আফ্রিকাকে একবারও অলআউট করতে পারেনি বাংলাদেশ। প্রথম টেস্টে ৩ উইকেটে ৪৯৬ রানের পর দ্বিতীয় ইনিংসে ৬ উইকেটে ২৪৭ রান করে স্বাগতিকরা। দ্বিতীয় টেস্টে দ্বিতীয়বার নামতেই হয়নি; স্বাগতিকরা একমাত্র ইনিংসে ৪ উইকেটে করে ৫৭৩ রান।
সিরিজে সেঞ্চুরি হয়েছে ছয়টি, তার সব কটিই স্বাগতিকদের। প্রথম টেস্টে শতক পাওয়া ডিন এলগার, হাশিম আমলা সেঞ্চুরি পেয়েছেন দ্বিতীয় টেস্টেও। ব্লুমফন্টেই রান উৎসবে তাদের সঙ্গে যোগ দেওয়া এইডেন মারক্রাম ও ফাফ দু প্লেসি পৌঁছান তিন অঙ্কে। 
এলগার-মারক্রাম-আমলা-দু প্লেসিদের একদমই ভাবাতে পারেনি বাংলাদেশের বোলাররা। পেস-স্পিন সবই সহজে খেলেছেন স্বাগতিকরা। অতিথি বোলারদের এত সহজে সামলানোর একটা ব্যাখ্যা দিয়েছেন অধিনায়ক দু প্লেসি।
ওরা প্রচুর বাউন্ডারি বল দিয়েছে। আমরা ভালো বলগুলো ঠেকিয়ে গেছি। জানতাম, ওভারে একটা-দুইটা বাউন্ডারি বল মিলবে। আমরা সেগুলো কাজে লাগানোর ব্যাপারে মনোযোগী ছিলাম।
সঠিক লাইন, লেংথে লম্বা সময় বল করতে না পারায় দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যানদের জন্য কাজটা অনেক সহজ ছিল বলে মনে করছেন পোলক।
বাংলাদেশের পেসারদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল, সঠিক লাইন, লেংথে একটানা বল করে যাওয়া। দক্ষিণ আফ্রিকায় উইকেট নিতে হলে এটা আপনাকে শিখতেই হবে। ব্যাটসম্যানকে ঠিক মতো পড়তে পারতে হবে।
উইকেটে থাকা বাউন্স কাজে লাগাতে পারেননি বাংলাদেশের পাঁচ পেসারের কেউ। তাতে অবশ্য খুব একটা অবাক হননি পোলক।
পেসারদের উচ্চতা বেশি ছিল না। যে কারণে ওরা উইকেটে থাকা সুবিধা সেভাবে কাজে লাগাতে পারেনি। গতিও খুব বেশি ছিল না, তাই ওদের পরিকল্পনা কাজে লাগেনি।
সুইং বোলিংয়ের জন্য পরিচিত সাবেক পেসার ডি ভিলিয়ার্স মনে করেন, টেস্টে সাফল্য পেতে বাংলাদেশের বোলারদের গতি বাড়াতেই হবে। তাদের আরও শক্তিশালী হতে হবে।
টেস্টে উইকেট পেতে হলে আপনার গতি লাগবে। তার সঙ্গে লাগবে দারুণ নিয়ন্ত্রণ। চার-পাঁচ ওভারের স্পেল সব সময় কার্যকর নাও হতে পারে। গতি বজায় রেখে লম্বা সময় ধরে বল করে যাওয়ার সামর্থ্য লাগবে।
বাংলাদেশের পেসাদের বাউন্সার কেন কার্যকর ছিল না তার ব্যাখ্যা দিলেন ১৮ টেস্টে ৮৫ উইকেট নেওয়া ডি ভিলিয়ার্স।
দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যানরা লম্বা, ওদের কাঁধ উচ্চতায় বল তুলতে বাংলাদেশের বোলারদের প্রায় মাঝ পিচে বল ফেলতে হয়। গতি বেশি না থাকায় সেই বল সহজেই খেলে ব্যাটসম্যানরা। অন্য দিকে, দক্ষিণ আফ্রিকার পেসাররা ব্যাটসম্যানের অনেক সামনে থেকে আচমকা বল তুলে ফেলতে পারে। এটাই দিন শেষে পার্থক্য গড়ে দেয়।
দক্ষিণ আফ্রিকার দুই সাবেক পেসারই মুগ্ধ মুস্তাফিজে। পোলক মনে করেন, ডানহাতি ব্যাটসম্যানদের জন্য ইনসুইং শিখলে পারলে আরও কার্যকর হয়ে উঠবেন বাঁহাতি পেসার। ডি ভিলিয়ার্স মনে করেন, আরেকটু শক্তিশালী হতে হবে বাংলাদেশের এই তরুণকে।
মুস্তাফিজের মধ্যে আমি সুইং বোলিংয়ের দারুণ সম্ভাবনা দেখি। ওকে স্রেফ আরেকটু দ্রুত গতিতে বল করতে হবে। ওকে আরেকটু শক্তিশালী হতে হবে। আগামী কয়েক বছরে ও দুর্দান্ত এক বোলারে পরিণত হবে।
দুই টেস্টেই বোলারদের পারফরম্যান্সে হতাশ অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। বোলারদের কাছে তার চাওয়াটা ছিল অল্প। শুরুতে উইকেটে থাকা সুবিধাটা নেওয়া আর সঠিক লাইন, লেংথে বল করে যাওয়া। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটেও এই কাজের অভিজ্ঞতা খুব একটা না থাকায় হয়তো পেরে উঠেননি পেসাররা।
কোর্টনি ওয়ালশের মতো একজন কিংবদন্তি পেসার বাংলাদেশের পেস বোলিং কোচ। তার কাছ থেকে কেন পেসাররা কিছু শিখতে পারছেন না সেটা একটা বিস্ময় পোলক-ডি ভিলিয়ার্সের কাছে। এটা বাংলাদেশের ক্রিকেটেও একটা বড় বিস্ময়।


পাকিস্তানের প্রতিরোধে দুবাইয়ে জমেছে নাটক


শেষ দিনে জয়ের জন্য পাকিস্তানের চাই ১১৯ রান, শ্রীলঙ্কার প্রয়োজন ৫ উইকেট।
প্রথম ইনিংসে ২২০ রানে পিছিয়ে ছিল পাকিস্তান। তখনও পর্যন্ত ম্যাচ ছিল এক তরফাই। নাটকের শুরু দ্বিতীয় ইনিংস থেকে। তৃতীয় দিন বিকেলে ৩৪ রানে ৫ উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা।
সোমবার চতুর্থ দিনে শ্রীলঙ্কা গুটিয় যায় ৯৬ রানে। পাকিস্তানের লক্ষ্য দাঁড়ায় ৩১৭। সেই রান তাড়ায় ৫২ রানেই পাকিস্তান হারায় ৫ উইকেট।
অমন বিপর্যয়ের পর অসাধারণ এক জুটি গড়েন আসাদ শফিক ও সরফরাজ আহমেদ। চতুর্থ দিনে আর উইকেট হারায়নি পাকিস্তান। ধ্বংসস্তুপ থেকে জাগিয়েছে জয়ের সম্ভাবনা।
৫ উইকেটে ৩৪ রান নিয়ে দিন শুরু করা শ্রীলঙ্কাকে এদিন খানিকটা টানেন কুসল মেন্ডিস ও নিরোশার ডিকভেলা। পরে ৩ চারে ১৭ রান করেন রঙ্গনা হেরাথ। শ্রীলঙ্কা এগিয়ে যাচ্ছিল একশর দিকে। বাধ সাধেন হারিস সোহেল।
অনিয়মিত এই বাঁহাতি স্পিনার চোখের পলকে মুড়িয়ে দেন শ্রীলঙ্কার লেজ। ১ ওভারেই ৩ উইকেট নিয়ে গুটিয়ে দেন শ্রীলঙ্কাকে।
মোমেন্টাম তখন পাকিস্তানের দিকে। কিন্তু দ্রুত আবার তা নিজেদের দিকে টেনে নেয় শ্রীলঙ্কা। শুরুতে দুই উইকেট নেন দুই পেসার। পরে দারুণ বোলিংয়ে তিন উইকেট নিয়ে পাকিস্তানকে বিপদে ঠেলে দেন দিলরুয়ান পেরেরা।
ম্যাচ তখন চতুর্থ দিনেই শেষ হওয়ার পথে। উইকেটে পাকিস্তানের ভরসার শেষ জুটি। সেই জুটিই দারুণভাবে ম্যাচে ফেরাল পাকিস্তানকে। সিরিজে আগের তিন ইনিংসে ব্যর্থ শফিক দিন শেষে অপরাজিত ১৪১ বলে ৮৬ রানে। অধিনায়ক সরফরাজের ব্যাটে এসেছে অপরজিত ৫৭। ষষ্ঠ উইকেটে দুজনের অবিচ্ছিন্ন জুটির রান ১৪৬।  
মোমেন্টাম আবারও পাকিস্তানের সঙ্গে। তবে একটি উইকেট ঘুরিয়ে দিতে পারে মোড়। নতুন দিনে শ্রীলঙ্কা শুরু করবে নতুন আশায়। কে জানে, আরও কত নাটক জমা রেখেছে দুবাই!
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস: ৪৮২
পাকিস্তান: ২৬২
শ্রীলঙ্কা ২য় ইনিংস: ২৬ ওভারে ৯৬ (আগের দিন ৩৪/৫) (মেন্ডিস ২৯, ডিকভেলা ২১, পেরেরা ০, হেরাথ ১৭, গামাগে ১*, প্রদিপ ০; আব্বাস ১/৬, ইয়াসির ২/৪৭, ওয়াহাব ৪/৪১, সোহেল ৩/১)।
পাকিস্তান ২য় ইনিংস: ৭৩ ওভারে ১৯৮/৫ (লক্ষ্য ৩১৭)(মাসুদ ২১, আসলাম ১, আজহার ১৭, সোহেল ১০, শফিক ৮৬*, বাবর ০, সরফরাজ ৫৭*; লাকমল ০/২৮, গামাগে ১/২৭, হেরাথ ০/৫২, প্রদিপ ১/৬, পেরেরা ৩/৭৬, মেন্ডিস ০/৭)।


ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের যে ভুল


ব্লুমফন্টেইন টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে মুশফিকের আগে-পরে মুমিনুল হক ও মাহমুদউল্লাহর হেলমেটে আঘাত হানে বাউন্সার। তিনবারই দেখা গেছে বল থেকে অনেক আগেই চোখ সরিয়ে নিয়েছিলেন ব্যাটসম্যান।
প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল খেলোয়াড়ী জীবনে ছিলেন বাংলাদেশের সেরা ব্যাটসম্যানদের একজন। জানেন বাউন্সার সামলানো কতটা কঠিন। তবে এখন বোলিং মেশিনে দ্রুত গতির বলে এত অনুশীলনের পরও এক ইনিংসে তিন জনের হেলমেটে বল লাগায় অবাক হয়েছেন তিনি।
আমি বলবো মনোযোগের ঘাটতির জন্য এমন হয়েছে। মনসংযোগ নড়ে না গেলে বল থেকে চোখ সরবে না। খেলার সময় তো বটেই ছাড়ার সময়ও শেষ পর্যন্ত বলে চোখ রাখতে হয়। বলে ওদের চোখ ছিল না। এটার আরেকটা কারণ হতে পারে, ওরা আগেই ঠিক করে রেখেছিল এই বল খেলব না।
মুশফিক এখন ঠিক আছেন। চিকিৎসক নানাভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেছেন কোনো ঝুঁকিতে নেই বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়ক। বল হেলমেটে লাগলেও আঘাত পাননি মুমিনুল, মাহমুদউল্লাহ। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার পেস আর বাউন্সারে লুটিয়ে পড়েছে বাংলাদেশ।
পচেফস্ট্রুমে প্রথম ইনিংসে ৩২০ করা বাংলাদেশ গুঁড়িয়ে যায় ৯০ রানে। দ্বিতীয় টেস্টে ১৪৭ রানের পর ১৭২। দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যানের রান উৎসবের বিপরীতে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানের গল্পটা উইকেট যাওয়া আর আসার। বাংলাদেশের প্রাপ্তি কেবল মুমিনুল, মাহমুদউল্লাহ আর লিটন দাসের তিনটি ফিফটি। যেখানে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যানরা তিন ইনিংসে পেয়েছেন ছয়টি সেঞ্চুরি।
বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের কাছ থেকে আরও লড়াই আশা করেছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক অধনায়ক শন পোলক। ফ্ল্যাট উইকেটে ব্যাটসম্যানের এমন ব্যর্থতায় বিস্মিত তিনি। নিজের মতো করেই খোঁজার চেষ্টা করেছেন ব্যর্থতার ব্যাখ্যা।
আমার মনে হয়েছে, ওরা প্রতিটি বল খেলতে চেয়েছে। টেস্টে তো বল ছাড়াটা শিখতে হবে। ব্যাটসম্যানদের উচ্চতাও বেশি না। ওরা যখন শর্ট বল শক্ত হাতে খেলেছে সেটা লাফিয়ে উঠেছে। ওদের কাছ থেকে আরও ভালো টেকনিক আশা করেছিলাম।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের আগে কিভাবে কোর্টনি ওয়ালশ আর কার্টলি অ্যামব্রোসের আগুনে গোলা সামলানোর প্রস্তুতি নিতেন পোলক বলছিলেন সেই গল্প।
আমরা ইনডোরে লম্বা সময় ধরে টেনিস বল ছাড়তাম। বলগুলো খুব দ্রুত আসত। কিছু শরীরে লাগত, কিছু ছাড়তে পারতাম। এভাবে নিজেদের প্রস্তুত করে যাওয়ার পর ওয়ালশ-অ্যামব্রোসকে খেলা সম্ভব ছিল। আমি জানি না, বাংলাদেশ ঠিক কী ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে এসেছে।   
বাউন্স সামলাতে দৃশ্যমান তেমন কোনো কৌশল দেখা যায়নি। বাংলাদেশের আগের সিরিজেই অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানরা স্পিন আক্রমণ সামলাতে এক পায়ে প্যাড ছাড়া নেটে ব্যাটিং করেছিলেন। টেস্ট ক্রিকেটের প্রতিষ্ঠিত দলগুলো এভাবে সব কৌশলেই নিজেদের প্রস্তুত করে।
শুধু সব বল খেলার চেষ্টায় নয়, ব্যাটসম্যানরা তালগোল পাকিয়েছেন বল ছাড়ার ক্ষেত্রেও। খেলার বল ছেড়ে দিয়ে এলবিডব্লিউ, বোল্ডের ঘটনা দেখা গেছে কয়েক বার। কঠিন সময় পার করে দিয়ে বাজে বলে উইকেট ছুড়ে আসার হওয়ার প্রবণতাও ছিল ব্যাটসম্যানদের মাঝে। লেগ স্টাম্পের বাইরের বলে কয়েকবারই উইকেট উপহার পেয়েছেন স্বাগতিক বোলাররা। 
মাটি কামড়ে উইকেটে পড়ে থাকার প্রবণতা দেখা যায়নি প্রায় কারোর মাঝেই। সবই শট খেলার চেষ্টা করেছেন। রানের জন্য তাদের সহায় ছিল বাউন্ডারি। প্রান্ত বদল করে খেলার চেষ্টা দেখা গেছে কমই। হয়নি তেমন কোনো জুটি।
দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্যাটসম্যানরা কেন বড় ইনিংস খেলতে পারছেন না তার ব্যাখ্যা বাংলাদেশের কোনো ক্রিকেটার দেননি। ক্রিকেটে এমন হয় বলে সংবাদ সম্মেলনে তারা এড়িয়ে গেছেন।
একটা ব্যাখ্যা আছে দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক ফাফ দু প্লেসির কাছে। তিনি মনে করেন, দক্ষিণ আফ্রিকার বড় সংগ্রহের জন্য চাপে পড়েছিলেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। সেই চাপ আর বোলারদের ভালো বোলিংয়ে ভেঙে পড়েছে মুশফিকের দল।
আমরা জানতাম ওরা খুব চাপে আছে। আমাদের দায়িত্ব ছিল এটা নিশ্চিত করা, ওরা যেন চাপটা কাটিয়ে উঠতে না পারে। ওদের আমরা কোনো জায়গা দেইনি। ওরা প্রচুর শট খেলে তাই বোলাররা জানত, সুযোগ আসবেই। আমরা সুযোগগুলো কাজে লাগাতে উন্মুখ ছিলাম।
ক্রিকেট বিশ্বকে নিজেদের সামর্থ্য দেখানোর চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসা বাংলাদেশ জেনেছে, ঠিক কোন অবস্থানে আছে তারা। নিজেদের আরেক ধাপ এগিয়ে নিতে ঠিক কতটা উন্নতি করতে হবে তাদের।
মুশফিক বলেছেন, এবারের সফর থেকে তাদের শেখার অনেক কিছু আছে। তারা কতটা শিখতে পেরেছেন সেটা সময়ই বলে দেবে।


বেয়ারস্টোর বাবার আত্মহত্যা ও ক্যান্সার আক্রান্ত মায়ের লড়াইয়ের গল্প


বাবা ছিলেন ইংল্যান্ডের জাতীয় দলের ক্রিকেটার। দেশের হয়ে টেস্টও খেলেছেন। ছেলে জনি বেয়ারস্টকে ছোট থেকেই নিরন্তর উৎসাহ জুগিয়ে গেছেন খেলাধুলায়। কিশোর বয়সে ক্রিকেট ও ফুটবল দুটোই পছন্দ করতেন ইংলিশ উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান বেয়ারস্টো। বাবা চাইতেন, ছেলে যেটা পছন্দ করবে সেটাতেই তার যাত্রা শুরু করবে। সবকিছু ঠিক চলছিল। কিন্তু হঠাৎ অজানা এক ঝড়ে ভেঙে গুঁড়িয়ে গেল সুখের সংসার!
বেয়ারস্টো যখন ছোট, তখন তার মায়ের ক্যান্সার ধরা পড়ে। চিকিৎসার সামর্থ্য ছিল না। হতাশ হয়ে পড়েছিলেন বাবা। আজ থেকে ১৯ বছর আগে একদিন বাড়ি এসে ৮ বছর বয়সী ছেলেটি দেখল, বাবা ডেভিড সিলিংয়ে ঝুলে আছেন! দেহে প্রাণ নেই! 
বাবা হাল ছেড়ে দিলেও হাল ছাড়লেন না বেয়ারস্টোর ক্যান্সার আক্রান্ত মা জ্যানেট। ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের পাশাপাশি লড়াই শুরু করলেন ছেলেকে মানুষের মতো মানুষ করার।
ছেলে বাবার পথ অনুসরণ করে ক্রিকেট মাঠেই তার জীবন গড়তে চেয়েছিল। মা বাধা দেননি। বাবার মতোই ইয়র্কশায়ারে খেলছেন বেয়ারস্টো। বাবার কাছ থেকে তাকে হাতে-কলমে ক্রিকেট শেখার সুযোগ না পেলেও বেয়ারস্টোর উইকেটকিপিং প্রায় তার বাবার মতোই।
মায়ের সঙ্গে জনি বেয়ারস্টো। ছবি : ইন্টারনেট
প্রায় ২০ বছর হয়ে গেল বাবার মৃত্যু নিয়ে চুপ করে ছিল বেয়ারস্টো পরিবার। শেষ পর্যন্ত বেয়ারস্টো তার আত্মজীবনী 'এ ক্লিয়ার ব্লু স্কাই' এ বিষয়টি উল্লেখ করেন। বইটিতে তিনি মায়ের কিছু কথা তুলে ধরেছেন, 'ক্যান্সার ধরা পড়ার পর সন্তানদের জন্য আমাকে শক্ত হওয়ার দরকার ছিল। এরপর ডেভিডও চলে গেল।  সে এটা কেন করেছিল, তা হয়তো কখনোই জানতে পারব না। এ জন্য নিজেকে অপরাধী ভাবা যেতে পারে, দোষারোপ করা যেতে পারে, কিন্তু পেছনে ফিরে তাকানোর সুযোগ নেই। আমাকে সামনে তাকাতেই হতো। এ ধরনের পরিস্থিতিতে ছোট ছোট লক্ষ্য স্থির করতে হয়, আমরা ঠিক সেটাই করেছি, কখনো বেশি দুরে তাকাইনি। '
তিন সন্তান জনি, বেকি আর অ্যান্ড্রু (বৈমাত্রেয় ভাই) নিয়ে জীবনসংগ্রামে জ্যানেট সফল হয়েছেন। ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কিছুটা হলেও জয়ী হয়ে এখনো বেঁচে আছেন তিনি। ছেলে বেয়ারস্টো মাকে কোনোভাবে কষ্ট দিতে চান না। বইতে লিখেছেন, 'বাবার মৃত্যু কেন হয়েছিল তা নিয়ে প্রশ্ন করার কিছু নেই। তাহলে ঘুরে দাঁড়ানো যাবে না। বাবা হারানোর কষ্টকে প্রাধান্য দিলে মায়ের স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ত। তাই বাবার মৃত্যু ভুলে আমি মায়ের স্বাস্থ্যের দিকেই নজর দিয়েছিলাম। '
ইংল্যান্ডের হয়ে ৪ টেস্ট ও ২১ ওয়ানডে খেলেছিলেন বাবা ডেভিড বেয়ারস্টো। ইয়র্কশায়ারের হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ১৪ হাজার রানের পাশাপাশি ১০৯৯ ডিসমিসাল রয়েছে ডেভিডের। আর জনি বেয়ারস্টো এখন ইংল্যান্ড জাতীয় দলের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ।


কঙ্কাল বেরিয়ে পড়া ব্যাটিং!


এই দিনেও মাঠে থাকার কথা ছিল তাঁদের। কিন্তু আড়াই দিনে ব্লুমফন্টেইন টেস্ট শেষ হয়ে যাওয়ায় অনুশীলনে বাংলাদেশ। সেই ম্যানগাউং ওভালে। ঐচ্ছিক সেই অনুশীলনে অবশ্য টেস্টের আট ব্যাটসম্যানের কেউ আসেননি। দুই টেস্টে যেমন তাঁদের পারফরম্যান্স, এর সঙ্গে ধাতস্থ হওয়ার জন্য হয়তো-বা সময় নিচ্ছেন কিছুটা।
আসলে কতটা এগিয়েছে বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেট? এই ফরম্যাটের ব্যাটিং? পরিসংখ্যান একটা আস্ত গাধা বলা হয় বটে, কিন্তু বেশির ভাগ সময়ই তো সেটিকে উপেক্ষার উপায় থাকে না। আর সেই রেকর্ড বই বাংলাদেশ ক্রিকেটের কঙ্কালটা বের করে দিচ্ছে বড্ড নির্মমভাবে!
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে পর পর তিন ইনিংসে ৯০, ১৪৭ ও ১৭২ রানে অলআউট হওয়ার পর সেই কঙ্কালটাকেও তো মনে হচ্ছে প্রস্তর যুগের! সেই ব্যাটিংয়ে প্রতিচ্ছবি আবার বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটের প্রস্তর যুগের।
প্রোটিয়াদের বিপক্ষে টপ অর্ডারের সাতজনের পারফরম্যান্সে একবার চোখ বোলানো যাক। তামিম ইকবাল খেলেছেন কেবল প্রথম টেস্ট। সেখানে প্রথম ইনিংসের ৩৯ রানের পর দ্বিতীয়টিতে শূন্য; গড় তাই ১৯.৫। আরেক ওপেনার ইমরুল কায়েসের চার ইনিংসে রান ৭, ৩২, ২৬ ও ৩২।
সাকুল্যে ৯৭; গড় ২৪.২৫। এমনিতে হয়তো অত খারাপ মনে হবে না। ভাববেন, অন্তত তিন ইনিংসে শুরু পেয়েও কেন তা বড় করতে পারেননি? কিন্তু ক্রিজে ইমরুল যেভাবে ধুঁকেছেন, সেটি দেখলে মনে হবে এই ঢের! এর চেয়ে বেশি আসলে প্রাপ্য নয় তাঁর। আর সৌম্য সরকার? দ্বিতীয় টেস্টে সুযোগ পেয়ে দুই ইনিংসে ৯ ও ৩ রান। মোট ১২ রান, গড় ৬। এর চেয়ে দৃষ্টিকটু আর কী হয়!
মমিনুল হক পচেফস্ট্রুমে ৭৭ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। সেখানেই দায়িত্ব শেষ। পরের তিনটি ইনিংস তাই ০, ৪ ও ১১ রানের। সিরিজে তাঁর মোট রান ৯২; গড় ২৩। অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম জীবন পেয়েছেন দফায় দফায়। কিন্তু কোনোবারই তা কাজে লাগিয়ে বড় স্কোর করতে পারেননি। ৪৪, ১৬, ৭ ও ২৬-এ অধিনায়কের মোট রান ৯৩, গড় ২৩.২৫। কোনো ইনিংসেই তাঁর ব্যাটিং আস্থা ছড়াতে পারেনি। মাহমুদ উল্লাহও তাই। যদিও সিরিজের প্রথম ও শেষ ইনিংসে ৬৬ ও ৪৩ রান তাঁর। মাঝের দুটো ইনিংসে ৯ ও ৪। সব মিলিয়ে সিরিজে দেশের সর্বোচ্চ ১২২ রান তাঁর। সর্বোচ্চ ৩০.৫০ গড়ও তাঁর। এর পরই লিটন দাশ। ব্লুমফন্টেইনে প্রথম ইনিংসে ৭০ রানের বাইরে ২৫, ৪ ও ১৮ রানের অন্য তিন ইনিংস। মোট রান ১১৭; গড় ২৯.২৫। আর সাব্বির রহমানের অবিমৃশ্যতার কাছে হার মানতে হবে সবাইকে। সেটি ৩০, ৪, ০ ও ৪ রানের ইনিংসে মোট ৩৮ রান কিংবা ৯.৫ গড়ের জন্য নয় শুধু। বারবার যেভাবে আউট হয়েছেন, সেটি টেস্ট ক্রিকেটে বড্ড বেমানান।
তাহলে সব মিলিয়ে দাঁড়ালটা কী! সিরিজে বাংলাদেশের দুজন মাত্র ব্যাটসম্যান মাহমুদ ও লিটনের মোট রান ১০০-র ওপরে। যেখানে দক্ষিণ আফ্রিকার চার ব্যাটসম্যানের রান দুই শর ওপরডিন এলগার (৩৩০), হাশিম আমলা (২৯৭), এইডেন মারক্রাম (২৫৫) ও ফাফ দু প্লেসিস (২৪২)।   সফরকারীদের সর্বোচ্চ ৩০.৫০ গড় মাহমুদের। বিপরীতে স্বাগতিকদের ওই চার ব্যাটসম্যানের গড় চোখ কপালে তুলে দেওয়ার মতোদু প্লেসিস (২৪২), এলগার (১১০), আমলা (৯৯) ও মারক্রাম (৮৫)। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের চার ইনিংসে মোট ফিফটি তিনটি। আর দক্ষিণ আফ্রিকার সেঞ্চুরিই ছয়টি।
টাইগার উডসের সঙ্গে সিদ্দিকুর রহমান গলফ খেললে পার্থক্যটা হয়তো এত বিশালই হতো!
এই সিরিজটি ব্যতিক্রম হিসেবে দেখবেন? ব্যাটিং বিবেচনায় অন্তত তেমন কিছু ভাবার উপায় নেই। পচেফস্ট্রুম ও ব্লুমফন্টেইনের বিপর্যয়টা যেন সবার অলক্ষ্যেই কড়া নাড়ছিল দরজায়। রেকর্ড অন্তত তেমন সাক্ষ্যই দেয়। ২০১৫ সাল থেকে ধরলে টেস্টে ৩০টি ইনিংসে ব্যাটিং করেছে বাংলাদেশ। ২০১৫ ও ২০১৬ সালে ১২ ইনিংসের মধ্যে একটিতেও তারা অলআউট হয়নি ২০০-র নিচে। কিন্তু এ বছর খেলা ১৮ ইনিংসের মধ্যে ২০০-র আগে অলআউট সাতবার! জানুয়ারিতে ওয়েলিংটনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় ইনিংসে ১৬০ রানে গুঁড়িয়ে যাওয়ায় শুরু। ক্রাইস্টচার্চে দ্বিতীয় টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে আবার ১৭৩ রানে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজে গলের দ্বিতীয় ইনিংসে ১৯৭ রানে গুটিয়ে যাওয়া। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে চট্টগ্রামেও একবার অলআউট ১৫৭ রানে। এরপর দুঃস্বপ্নের এই সিরিজ। পচেফস্ট্রুমে ৯০ রানে মুখ থুবড়ে পড়ার পর ব্লুমফন্টেইনে ১৪৭ এবং ১৭২ রানে অলআউট।
এমন পরিসংখ্যানকে উপেক্ষার উপায় নেই। দলের প্রতিনিধি হয়ে লিটন তাই যখন বলেন, বাংলাদেশ ব্লুমফন্টেইন টেস্টের দ্বিতীয় দিন ছয় শ রান করতে পারবে কিংবা কোনো এক ব্যাটসম্যান করতে পারেন ডাবল সেঞ্চুরিতখন নিজেদের ক্রিকেটমূর্খতার কারণে আয়নার সামনে আরেকবার দাঁড়ানো ছাড়া উপায় থাকে না। আর সাম্প্রতিককালের এমন বাজে ব্যাটিংয়ের পরও যদি সতর্কঘণ্টা না বাজে বাংলাদেশ ক্যাম্পে, তাহলে পাগলাঘণ্টি বেজে উঠতে দেরি নেই বোধকরি!


Copyright © 2014 Bd Sports All Right Reserved
^